ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


সাতক্ষীরায় নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে চাইঃ নূরজাহান মঞ্জুর


১৩ জানুয়ারী ২০১৯ ১৩:২৬

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর, সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় পুলিশ নারী কল্যান সমিতির সদস্য, রংপুর ওমেন চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র কার্যকরি সদস্য এবং রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের কার্যকরি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ নারী কল্যাণ সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছন। এছাড়া তিনি সাতক্ষীরায় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সাথে। সাক্ষাতকার আকারে সেটি পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো...

নতুন সময়: আপনার রাজনীতিতে আসার গল্পটা শুনতে চাই।

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: বঙ্গবন্ধুকে আমি সবসময়ই আদর্শ হিসেবে মেনেছি এবং মনেপ্রাণে তার আদর্শকেই ধারণ করি এবং বাকী জীবন তাঁকেই অনুসরণ করবো। ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিএনসিসি সহ বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেও কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে সরাসরি থাকা হয়নি। তবে বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

নতুন সময়: আপনি কেন সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরায় স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির-বিএনপি চক্র অরাজকতা সৃষ্টি করে এবং একের পর এক খুনসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলার পর আমার স্বামী ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখ পুলিশ সুপার হিসেবে সাতক্ষীরায় যোগদানের পর ০৭ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে সাতক্ষীরা জেলায় বিন্দুমাত্র সহিংসতা ছাড়াই ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে সাতক্ষীরায় সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছিল বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ, আমার স্বামীর আন্তরিকতা, দক্ষতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের কারণেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলায় কোনরূপ সহিংস ঘটনা ঘটেনি। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি যে রকম সাংগঠনিক দক্ষতা পুরো জেলা জুড়ে দেখিয়েছেন, তার সাথে পুরোটা সময় থেকে আমিও সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দক্ষতা অর্জন করেছি। এছাড়াও প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমগ্র সাতক্ষীরাবাসীকে উজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী হিসেবে বিজয় মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বৈশাখী মেলাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ নানাবিধ জাতীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের মাধ্যমে সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক ডিএনএ পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচার করায় সাতক্ষীরা থেকে ধীরে ধীরে মৌলবাদী রাজনীতির বিষবাষ্প উধাও হবার পথে ছিল। এসব কর্মকান্ড আমার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে সহয়ক ভূমিকা পালন করবে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আরো কাজ করতে পারবো বলে মনে করি।

 

নতুন সময়: আপনার মত দলে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। এটাকে কেন্দ্র করে কি নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বা মতবিরোধ হতে পারে?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারায় একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকাটাই স্বাভাবিক। কেউই অযোগ্য নন। তবে আমি মনে করি, আমার স্বামীর সাংগঠনিক দক্ষতা সাতক্ষীরার জনগণ জানে। তার সাথে মাঠ পর্যায়ে থেকে আমিও সেসব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যোগ্যতার বিচারে আমিও কম নই। কিন্তু কাউকে ছোট করে দেখছিনা।

নতুন সময়: আপনি যদি নির্বাচনে জয়লাভ করেন তাহলে কোন তিনটা কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলাকায় মানুষের জন্য করবেন ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: একজন সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের জন্য যতটা করা যায় তার সবই আমি নিষ্ঠার সাথে করবো। তবে দায়িত্বের বাইরেও নিজ উদ্যোগে সর্বস্তরের নারী সমাজকে সাথে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে নজর দিবো। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নই তো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত। সেদিকে অবহেলা করার তো কোন সুযোগই নেই। সাতক্ষীরার নারী সমাজকে যাতে অপসংস্কৃতি-সাম্প্রদায়িকতা-অনাচার-উচ্ছৃঙ্খলতা ষ্পর্শ করতে না পারে, তার জন্য যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে আমি একটা স্বপ্ন দেখি, একদিন পুরুষের মত সাতক্ষীরার নারীরাও দিনরাতের যে কোন সময় স্বাচ্ছন্দ্যে নিরাপদে যে কোন জায়গায় নির্ভয়ে চলাচল করতে পারবে। তার মানে সাতক্ষীরার নারী সমাজের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সাতক্ষীরার সকল নারীকে স্বাবলম্বী করতে, দারিদ্র্যের সংস্কৃতি থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চাই। পাশাপাশি সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চর্চার মাধ্যমে সাতক্ষীরা হতে সকল কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূর করতঃ সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য নির্মূল করতে চাই।

নতুন সময়: বর্তমানে কোন সমস্যাটির জন্য আপনার নির্বাচনী এলাকার মানুষ ভোগান্তি বা দূর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: সমস্যা যা আছে, তা সাতক্ষীরার সব জনগণই জানে। তাই সমস্যা যাই থাকুক না কেন, সাতক্ষীরার জনগণকে বা সুনির্দিষ্টভাবে যদি বলি তাহলে সাতক্ষীরার নারী সমাজকে সাথে নিয়ে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নতুন সময়: আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: কার কি ভবিষ্যত, মহান সৃষ্টিকর্তাই তা ভালো জানেন । আমার বর্তমান কর্মকান্ডই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিবে।

নতুন সময়: দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে সাতক্ষীরার উন্নয়ন নিয়ে আপনার ভাবনা কি ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: আমি আগে যা বলেছি এক কথায় তার অর্থ দাঁড়ায় আমি সাতক্ষীরার শতভাগ নারীকে পূর্ণ আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

নতুন সময়: সাতক্ষীরার মানুষের সময়ের দাবী উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা (সড়ক) আপনি নির্বাচিত হলে সড়ক সংস্কার বা বাস্তবায়নে কতটুকু গুরুত্ব দিবেন ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: এসবের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সাংসদ রয়েছেন। তথাপিও আমি সাতক্ষীরার জনগণের সকল যৌক্তিক দাবী পূরণেরই যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

নতুন সময়: বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আপনি কি করবেন বা কি করতে চান ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: নির্বাচিত হলে আমি আগামী ০৫ বছরের মধ্যে সাতক্ষীরার শতভাগ বেকারদের যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবো ইনশাল্লাহ্।

নতুন সময়: দীর্ঘদিন এই আসনে মানুষের সাথে একটি দূরত্ব তৈরী হয়েছে সেক্ষেত্রে মনোনয়ন পেলে আওয়ামীলীগের তৃণমূলকে একত্রিত করতে পারবেন কিনা ?

চৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুর: আমার স্বামী যখন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন তার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকে দায়িত্বের বাইরেও পুরো জেলার জনগণকে এক রাখার চেষ্টা করেছেন। তখন জেলায় কোন কোন্দল-সংঘাত ছিলনা। আর তার দেখানো পথ ধরেই আমি আমার কাজ আরো ভালোভাবে করে যাবো। কেননা তখন আমার হাতে কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতাও থাকবে।

নতুন সময়ঃ ধন্যবাদচৌধুরী নূরজাহান মঞ্জুরঃ আপনাকেও ধন্যবাদ