ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


বাবার ঘনিষ্ঠ সহচর মেয়েটিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চায় কেন?


১ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ড. কামাল হোসেন

বাবা হারানো একটা মেয়ের পিতৃঋণ শুধবার আকুলতা দেখে চোখে জল আসে, কেমন উদাস হয়ে যায় এ মন। কেন জানি না দৃশ্যমান কোনো দোষ না করেও নিজেকে অনেক বেশি অপরাধী, অকৃতজ্ঞ মনে হয়। সেই মেয়েটা নিরন্তর যে তাঁর নিহত বাবার ছায়া খুঁজে ফেরে, তা তাঁর আচরণেই স্পষ্ট বুঝা যায়। হায়রে বাবা-মা-ভাই হারা মেয়ে, হায়রে নিয়তি। এমন মেয়ের বাবা- ভাই হতেও হয়তো সাত জনমের ভাগ্য লাগে।

ছোট্ট একটা খবর বেরিয়েছে একটি নিউজ পোর্টালে। মেয়েটির চরম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিন্তু তাঁর বাবার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর যিনি প্রতিনিয়তই মেয়েটিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পরোক্ষভাবে উন্মত্ত, তাঁকেই তিনি তাঁর বাবার মতো আদর করে খাওয়াতে চান, বাবা যে নেই তাই। তাঁকে একসময় বাবার পাশে বসে খেতে দেখেছেন। হয়তো ভাবেন, তাঁকে খাওয়ানোর সময় যদি বাবা অলৌকিকভাবে আগের মতো এসে চাচার পাশে বসে পড়ে, হতেও তো পারে! কত অসম্ভবইতো হয় এই দুনিয়ায়! তাইতো তিনি জানতে চান কী কী খাবার তাঁর চাচা পছন্দ করবেন, দেখা করতে এলে। কারণ তিনি দেখা করতে চেয়েছেন বর্তমানে ক্ষমতাধর এই মেয়েটির সঙ্গে। এই সুযোগে মেয়েটি বলেছেন, ‘চাচাকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি কী কী খেতে চান’। হায়রে বাবা হারানো মেয়ে, হায়রে তাঁর প্রত্যাশা, হায়রে তাঁর পিতৃঋণ শুধবার আকুলতা।

তাঁকে দেখেছি তাঁর পিতাকে হত্যার পরে বঙ্গবীর উপাধিধারী যিনি পিতৃহত্যার প্রতিশোধের শপথ নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন, ছেড়েছিলেন নিজের মাতৃভূমি, পরিবার। তিনিও মেয়েটির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে যান পরে, কিন্তু ভায়ের স্নেহ থেকে কখনোই তাঁকে বঞ্চিত করেননি মেয়েটি। মেয়েটি তাঁর মাঝে নিহত ভাইয়ের ছায়া খোঁজে, প্রতিনিয়ত। এমন অনেক আছেন সারা দেশে তাঁর।

তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, বাবার বন্ধুরা তাঁর বাবার মতোই তাঁকে নিজের সন্তান মনে করে। তাই তো আমারা দেখি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে, তাঁর বাবার সহচর আর ভাইয়ের বন্ধুরা জীবন বাজি রেখে তাঁকে আগলে রাখে, রক্ষা করে। এ কারণেই মেয়েটির বিশ্বাস অটুট থেকে যায়, মেয়েটি অকৃতজ্ঞ হতে পারেন না। যদিও স্বার্থের টানপোড়েনে অনেকেই তাঁকে ছেড়ে গেছেন দৈহিক ও মানসিকভাবে। কিন্তু তিনি তা করতে পারেন না। তাইতো তাঁর অনেক সমালোচনা হয়, অনেকই কটু কথা বলে। তাঁরা মেয়েটির মনের সমীকরণ জানেনা তাই তাঁদের হিসাব মেলেনা। তাঁরা শুধু তাঁর বাইরের আবরণ দেখেই কথা বলে, বাবা-মা-ভাই হারা মেয়েটার অন্তরটা কেউ একটিবারের জন্য দেখার, বুঝার চেষ্টা করে না।

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নিজেকে কতখানি কৃতজ্ঞ ভাবলে নিজের সহকর্মীদের মতকে উপেক্ষা করে একটা মেয়ে, একটা বোন এমন করতে পারে তা কি আমরা কখনো ভাবি! মনে হয় না। আমি নিজে এমন অনেক পরিবারকে চিনি যিনি তাঁর বাবার বা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, পরে মারা গেছেন বা নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরে হয়তো ছিলেন তাঁর বাবা-ভাইয়ের চরম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তাঁদের প্রতি তাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মমতা দেখে হিংসে হবে অনেক বাবার, অনেক ভাইয়ের, অনেক মেয়ের।

বাবা নিহত হবার পরে দেশি বিদেশি হায়েনাদের দ্বারা যারা বিভিন্নভাবে শাস্তি পেয়েছেন, তাদের অনেকেই আজও তাঁর সঙ্গে আছেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ঐসব ত্যাগী মানুষগুলোকে দূরে সরাতে চায়। তিনি তাদের সব কথা শুনেও সায় দেন না।

সারা দেশে এমন কয়েক শত মানুষ আছে তাঁর বাবা আর ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারা অনেকেই তাঁর সঙ্গে আছেন, অনেকি আছে ভিন্ন পথে নানা কারণে। কিন্তু তিনি আছেন তাঁর একই পথে। প্রতিদিন শুধে যান তাঁর বাবা-ভাইয়ের রক্তের ঋণ। এই চরম ঋণগ্রস্ত মেয়েটির নাম আমাদের সবার প্রিয় আপা, নেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক: উন্নয়নকর্মী