ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


ফুটবল জোয়ারে জাগো বাংলাদেশ


২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৩

গোলের খেলা ফুটবল, গোল নামক সোনার হরিণ এখনো অধরাই রয়েছে দু’দলের কাছে- প্রয়াত খোদা বকশ মৃধা তার ধারাভাষ্যে প্রায় বলতেন এই কথাটি। গোলশুন্য ম্যাচে ধারাভাষ্যে প্রতিনিয়ত এই বাক্যটি বলতে বলতে আমরা এই প্রজন্মের ধারা ভাষ্যকারগণও যেন ক্লান্ত। আমাদের অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল দলের গোল বন্যায় যেন আমাদের সেই ক্লান্তি দূর হলো।

সম্প্রতি এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের বাছাই পর্বের ১ম রাউন্ডে এফ গ্রুপের আসর বসেছিল ঢাকায়। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত পাঁচ জাতির এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েরা রীতিমত প্রতিপক্ষ দলগুলোকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে এবং গোল বন্যায় ভাসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছেন।

মাত্র কদিন আগে ভুটানে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব ১৫ সাফ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত দলটির অনেকেই এই দলে খেলেছেন। সাফে পরাজয়ের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল চোয়ালবদ্ধ সংকল্প নিয়ে এবারের এই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল চ্যাম্পিয়নশীপের লক্ষ্য নিয়ে। তারা সফল হয়েছেন এবং বাছাইপর্বের ২য় রাইন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ২য় পর্বে ৬ গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং ২টি সেরা রানার্সআপসহ মোট ৮টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখান থেকে ৪টি দল মুল পর্বে খেলার টিকিট পাবে। এই মুল পর্বে খেলার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছে- গত আসরের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং স্বাগতিক থাইল্যান্ড। বাছাই পর্বের ২য় রাউন্ডের ভেন্যু ঠিক না হলেও, শুরুর সাম্ভাব্য সময় ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি।

সারাবান তহুরা, নাজমা, মারিয়া মান্ডা, আনুচিং মারমা, ঋতুপর্ণ চাকমা, আঁখি, মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার, প্রমুখ কিশোরী ফুটবলাররা প্রতিপক্ষের জালে ৪ ম্যাচে ২৭টি গোল দিলেও নিজেরা কোন গোল খায়নি। এরফলে তারা অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের মুল বাছাই পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। নাজমারা প্রথম ম্যাচে বাহরাইনকে ১০ গোল, ২য় ম্যাচে লেবাননকে ৮ গোল, ৩য় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৭ গোল এবং চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ভিয়েতনামকে ২ গোল দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার স্বাক্ষর রাখেন।

এইসব কিশোরীদের স্পিড, স্কিল, স্ট্যামিনা, গোল করার মুন্সিয়ানা, বল ডিস্ট্রিবিউশন, রিসিভিং, পাসিং, গেম প্ল্যানিং, রানিং, সুটিং, ট্যাকলিং, ম্যান মার্কিং, টেম্পারামেন্ট সবমিলিয়ে তাদের স্বপ্রতিভ ফুটবল প্রতিভা ছিল নজর কাড়ার মতো। এই মেয়েদেরে শ্রমে ঘামে যিনি গড়েছেন সেই প্রশিক্ষক গোলাম রব্বানী ছোটন দলটিকে নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। এদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে আগামীতে এরাই বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে সার্ভিস দিবে এবং কাঙ্খিত সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মেয়েদের এই গোল বন্যায় ভেসে যাক দেশের ফুটবল অঙ্গনের সকল অন্যায়-অনিয়ম। ফুটবলে ফিরে আসুক সোনালী দিন। তাইতো বলতে ইচ্ছে করে, ‘ফুটবল জোয়ারে জাগো বাংলাদেশ’।

এমএ