ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

পরিণতি


২১ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:০৬

দুপুরের তুমুল বৃষ্টির পর এখন রোদে চিকচিক করছে চারদিক। এখানে সেখানে পাখির কিচিরমিচির। পেলব ছোঁয়ার মতো গায়ে এসে লাগছে ঝিরিঝিরি বাতাস। বৃষ্টিধোয়া পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে মন্দ লাগছে না তুহিনের। চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন তাকে জানাচ্ছে সজীব অভ্যর্থনা। এর আগে এই নিভৃত গ্রামটাতে এসেছিল একবার। তাই গন্তব্যে যাওয়ার পথঘাট চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না।

রাত পোহালেই অন্য একজনের সাথে তুহিনের প্রেমিকার বিয়ে। সে বিয়ে আটকাতে আসেনি। রাতের অন্ধকারে প্রেমিকাকে নিয়ে পালাতে এসেছে। প্রেমিকা মানে বুশরাই তাকে খবর দিয়ে আনিয়েছে। মরবে, তবু তুহিনকে ছাড়া বাঁচবে না- এটা বুশরার প্রতীজ্ঞা। তুহিনরও একই দশা। বুশরার বিয়ের কথা শুনে প্রায় পাগলপারা হয়ে গিয়েছিল।

বুশরার বড়ভাই তাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানতেন। তাই তিনি সতর্ক পাহারা রেখেছেন সবখানে। কোনক্রমেই যেন বুশরা পালাতে না পারে। আর তুহিনকে ত্রিসীমানার আশপাশে দেখলেই যেন শুরু করে আক্রমণ। বুশরা-তুহিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের পালানোর কথা রাত একটায়। বাড়ির পেছনের ধানক্ষেতের আল ধরে কিছুক্ষণ এগোলেই মূল রাস্তা। সেখানে তুহিনের বন্ধু বাইক নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে। রাত দুটো পার হয়ে গেলেও তুহিনের নামগন্ধ নেই।

বুশরা হঠাৎ বাড়ির সামনে হট্টগোল শুনতে পেল। বক্সে গান বাজছে উচ্চশব্দে। পাশের বান্ধবীরা বা ঘরের মহিলারা কেউ কিছু জানে না। একজন এসে জানালো ডাকাত পড়েছে বোধহয়। মেরে একেবারে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে। বাড়ির সামনে থেকে যারাই ভেতরে আসছে সবার মুখে একই কথা- শালা, মরার আর জায়গা পাইলো না।

বর্ষার কারণে ধানক্ষেতে ছপছপে পানি, হাঁটু সমান। সবে ধান পাকতে শুরু করেছে। নিচু জমির কিছু ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাঁচাপাকা অবস্থায় কেটে ফেলা হয়েছে। তুহিন যে ক্ষেতটাতে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে সেটা এখনো কাঁচা। আঘাতে জর্জরিত ভারী শরীরটা টেনে আলের ওপর এসে হাঁপাতে লাগল তুহিন। নাক, মুখ ও কানের পাশ দিয়ে বেরুনো রক্তের জমাট দাগ এখনো লেগে আছে শরীরে। ব্যথায় কুঁকড়াতে কুঁকড়াতে কোনোরকমে উঁকি দিয়ে দেখে লোকে গিজগিজ করছে বুশরার বাড়ি। ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ভাবছে- ভালোবাসার পর রক্তাক্ত করার সাধটাও মিটিয়ে নিল বুশরা।

ততক্ষণে সূর্য ওঠে গেছে। তুহিন আরেকটু উঁকি দিল। কয়েকজন মানুষের আহাজারির শব্দ ভেসে এলো কানে। কষ্ট করে আর কিছু দূর এগিয়ে গেল সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। মনে হচ্ছে মরণের খুব কাছে চলে গেছে। বাবা-মার কথা মনে পড়ছে। ছোট ভাইটার কথাও মনে পড়ছে। আরেকটু এগিয়ে গেল। মরলে যাতে লাশটা পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়, সেটা বলে দেয়ার জন্য আশেপাশে কাউকে খুঁজে পেল না। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে জানতে পারল- ময়নাতদন্ত করার জন্য বুশরার লাশ নিতে এসেছে পুলিশ।

এসএমএন