ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


নারী অধিকার চান না ভারতীয় নারীরা


২২ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:০৪

ভারতের কেরালা রাজ্যে নারীরাই নারী অধিকারের বিরোধিতা করছেন। কেরালার সবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়ে রায় দিয়েছিল দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে এখন এই রায়েরই ঘোর বিরোধিতা করছে হিন্দুধর্মালম্বী নারীরা। খবর বিবিসির।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিল, অথচ একটা বড় অংশের নারীরাই তার বিরোধিতা করছেন, এবং সেটাও হচ্ছে এক শিক্ষিত রাজ্যে। কেরালায়। এ রাজ্যের মানুষ প্রায় শতভাগ শিক্ষিত। নারীদের পক্ষে সংখ্যালঘুদের পক্ষে এ রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিমকোর্টের নারী বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা বলেছিলেন যে, ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসে আদালতের হস্তক্ষেপ অনুচিত।

সে সময় কেরালার এক নারী বাসিন্দাও বলেছিলেন, ‘দেখবেন, আমরা মেয়েরাই এই প্রথা ভাঙ্গতে পারব না, যতই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিক। এটা আমাদের বিশ্বাস যে ১০-৫০ বছর বয়সী মেয়েদের ওই মন্দিরে যাওয়া উচিত নয়।’ সে অনুমানই যেন এখন ঠিক হলো।

সবরীমালায় যে আয়াপ্পার পুজা করা হয় ওই মন্দিরে বার্ষিক পূজা দিতে যাওয়ার আগে ৪১ দিন কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। তাই কেরালার ঐ মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সী নারীদের এতদিন প্রবেশ করার অধিকার ছিল না।

ওই মন্দিরে বার্ষিক পুজা দিতে যাওয়ার আগে ৪১ দিন কালো পোশাক পড়েন, সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার খান, খালি পায়ে থাকেন, দাড়ি কামান না এমনকি নারী সঙ্গও এড়িয়ে চলেন পুরুষরা।

এ মন্দিরে নারীরা প্রবেশ করলে ঈশ্বর রাগ করবেন বলে বিশ্বাস করেন নারীসহ হিন্দুদের একটা বড় অংশ। নারীরা ব্রহ্মচর্য পালন করা পুরুষদের সঙ্গে ওই মন্দিরের পাহাড়ি পথে একই সঙ্গে উঠলে তাঁদের ব্রহ্মচর্য বিঘ্নিত হতে পারে বলেও ধর্মীয় বিশ্বাস।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই সব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়েই রায় দিয়েছিল। ওই রায়ের পরে বেশ কিছুটা সময় কেটেছে। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।

গত বুধবার যখন ভগবান আয়াপ্পার বার্ষিক পুজার জন্য পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা ওই প্রাচীন মন্দির খুলেছে, স্বাভাবিকভাবেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। হাতে গোনা যে কয়েকজন নারী আদালতের নির্দেশে ভরসা করে মন্দিরে যেতে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে।

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নারী বিক্ষোভকারীরাই নারীদের তল্লাশি চালিয়েছেন। কোনো নারী মন্দিরের দিকে এগুচ্ছেন কী না সেটা দেখতে।

গত বৃহস্পতিবার পেশাগত কারণে, খবর জোগাড় করতে ওই মন্দিরের পাহাড়ি পথ বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক ভারতীয় নারী সাংবাদিক। তাকে প্রথমে বাঁধা দেয়া হয়, তারপরে পুলিশ বাহিনী নিয়ে ওপরে উঠছিল । কিন্তু সেখানেও পাথর ছোঁড়া হয় তার দিকে।

এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকারের বিরোধিতায় কেরালার বিজেপি এবং যুব সংগঠন আগে থেকেই সরব ছিল। বৃহস্পতিবার হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতও মুখ খুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে।

তিনি বলেছেন, নারী পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, তাদের সংগঠনও এটা স্বীকার করে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তো নারীরা নিজেরাই এই নিয়ম পালন করে থাকেন যে সবরীমালা মন্দিরে তারা যাবেন না - প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এটা। এ বিষয়ে উচিত ছিল ধর্মগুরুদের সঙ্গে আলোচনা করা, কারণ তারাই তো একমাত্র সঠিক বলতে পারবেন যে কোন ধর্মে কোন বিষয়টা করা উচিত, কোনটা অনুচিত।

এমএ