ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


কিশোরগঞ্জের ইদ্রিস আলীই আজ ইলিয়াস কাঞ্চন


১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৯

ঢাকাই চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি চলচ্চিত্রের নব্বই দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। বেদের মেয়ে জোছনা ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পেয়েছেন । যা এখন পর্যন্ত দেশের সর্বাধিক ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। ইলিয়াস কাঞ্চন ৩০০টিও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি একাধিকবার জাতিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। নাম বদলানোর তারকাদের দলে তিনিও অন্যতম। জনপ্রিয় এ অভিনেতার আসল নাম ছিল ইদ্রিস আলী। ১৯৭৭ সালে এ ইদ্রিস আলী সিনেমায় নাম লিখিয়ে হয়ে যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

ইলিয়াস কাঞ্চন ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাম হাজি আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন। তিনি ১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইস এস সি পাস করেন।

১৯৭৯ সালে জাহানারা কাঞ্চনের সাথে ইলিয়াস কাঞ্চনের কাবিন হয়। ১৯৮৩ সালে তাকে ঘরে তুলেন। তার স্ত্রী ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর কাঞ্চনের শুটিং দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।[১০] তাদের এক পুত্র, নাম মীরাজুল মঈন।

ইলিয়াস কাঞ্চন ১৯৭৭ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত বসুন্ধরা ছায়াছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। এর পর বাংলা চলচ্চিত্র দেখতে পায় এক প্রবাদ পুরুষের জন্মলগ্ন। একে একে ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি চিরদিনের মত বাংলা চলচ্চিত্র প্রেমীদের অন্তরে জায়গা করে নেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বসুন্ধরা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ববিতা। এরপর তিনি একই অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয় করেন ১৯৭৮ সালে ডুমুরের ফুল, ১৯৭৯ সালে সুন্দরী চলচ্চিত্রে। এ সময়ে তার আরো কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে শেষ উত্তর, নালিশ, অভিযান। অভিযান ছায়াছবিতে রাজ্জাক ও জসিমের পাশাপাশি তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।

১৯৮৬-১৯৯৫ সাল তার অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ১৯৮৬ সালে আলমগীর কবির পরিচালিত পরিণীতা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জনা রহমান। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? ছায়াছবিটি। তার বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। ১৯৮৯ সালে তার আরেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বেদের মেয়ে জোছনা মুক্তি পায়। রাজার ছেলে এক সাধারণ বেদের মেয়ের প্রেমে পড়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে তোলে। বাবা কর্তৃক বিচারের রায়ে ফাসীর আদিষ্ট হয়। পালিয়ে গিয়ে অন্য রাজ্যে জেলে বন্দী হয়। সীমাহীন কষ্টের এক অসাধারণ প্রেমের গল্প বেদের মেয়ে জোছনা তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসে। এতেও তার বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। এর পর তিনি অসংখ্য দর্শক প্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেন। যার মধ্যে শঙ্খ মালা, অচেনা, রাধা কৃষ্ণ, ত্যাগ উল্লেখযোগ্য।

এক সময় তিনি চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার কারণে অভিনয় থেকে সরে যেতে থাকেন। ২০০৫ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে শাস্তি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতিয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

২০০৬ সালে আবু সাইয়ীদ পরিচালিত নিরন্তর ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকটি অন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হয়। ২০০৮ সালে তিনি প্রথমবারের মত বাবা আমার বাবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালকের খাতায় নাম লিখান। ২০১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হঠাৎ দেখা কবিতা অবলম্বনে শাহাদাৎ হোসেন বিদ্যুৎ ও কলকাতার রেশমী মিত্রের পরিচালনায় একই নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে রয়েছে কলকাতার দেবশ্রী রায়।

বর্তমানে কাঞ্চন সামাজিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি তার স্ত্রীর সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হবার পর ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে "নিরাপদ সড়ক নিরাপদ জীবন" শ্লোগানে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। নিরাপড় সড়ক চাই আন্দোলন বর্তমান বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এর সাথে বিভিন্ন মহল একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তিনি বর্তমানে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রধান কান্ডারী। ২০১৫ সালের ৪ মে জাতিসংঘের ‘রোড সেফটি ফর আওয়ার চিলড্রেন’ কর্মসূচিতে অংশ নেন ইলিয়াস কাঞ্চন। রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল, খিলগাঁও, কাকরাইল, উত্তরা ও ধানমন্ডির পাঁচটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে এই কার্যক্রম চলে। এর স্লোগান- ‘ভবিষৎতের জন্য নিরাপদ সড়ক চাই’।

চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম 'জয় চলচ্চিত্র'। তার প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র হল মাটির কসম।

২০০৮ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম 'বাবা আমার বাবা'। এছাড়া ২০১০ সালে তিনি 'মায়ের স্বপ্ন' নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৮৬ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা
২০০৫ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা