ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


তাদের খোঁজ নিচ্ছে না সন্তানরা


৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:১৬

বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। ৫ সন্তানের জনক ছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। জীবনের সকল আয় খরচ করেছেন সন্তানদের কল্যাণে। বড় ছেলে সুইডেন, বাকি ৩ ছেলে ও ১ কন্যা আমেরিকায়। নিরবে নিভৃতে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন খ্যাতিমান এই অভিনেতা। ১টি সন্তানও এলেন না বাবাকে দেখতে। জীবনের শেষ বেলাতেও অভিনয় করতে হয়েছে জীবিকার তাগিদে।

২ সন্তানের জনক জনপ্রিয় কবি আল মাহমুদ। বনানীর বাড়ি বিক্রি করে সন্তানদের বিদেশ পাঠান তিনি। আর ফিরে আসেনি তার সন্তানরা। কবি আজ নিজ গ্রামের বাড়িতে বিছানায় মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দেখার কেউ নেই। এক সময় চলে যাবেন না ফেরার দেশে।

এরশাদের আমলে সরকার থেকে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন উপহার হিসেবে। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন,‘বনানীতে একটা জমি দিয়েছিলো। কবি নিজে সেখানে বাড়ি করেছিল। বাড়িটা করেছিলেন লোন করে। এদিকে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার জন্য সব বিদেশে গেল। তাদের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে টাকা লাগে। ফোন দিয়েই বলে আব্বা টাকা পাঠাও, আব্বা টাকা পাঠাও। এক কোটি ষাট লাখ টাকায় বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কবি মানুষ, তেমন আয়ের উৎস ছিল না তার। এত টাকা কোথায় পাবেন? এটা ভেবেই বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।’

সারাদিন বাসায় বই, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশন দেখেই দিন কাটে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রের। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটে যেতেন কাকরাইল ফিল্ম পাড়ায়। চা খেতেন, আড্ডা মারতেন। এখন সেটাও পারেন না। যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করেছেন, সেখানকার মানুষজন দু-একজন ছাড়া খোঁজখবরও নেন না তাঁর। স্ত্রী বেঁচে নেই ১৫ বছর। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্ব সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৭ বছর বয়সী এই অভিনেতার। তার এক মেয়ে তিন ছেলে। ছোট ছেলে ২০১২ সালে ৭ই মে মারা গেছেন। জানা যায়, সন্তানেরা ঠিকমতো খোঁজ নেন না তার।

২০১২ সালের ১৩ মার্চ এ টি এম শামসুজ্জামানের পুরানো ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ লেনের বাসায় খুন হন ছেলে এটিএম কামালুজ্জামান কবির। তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এই অভিনেতারই ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশল। হত্যাকাণ্ডের পর এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছোট ছেলে কুশলকে আসামি হিসাবে সনাক্ত করে খুনের বর্ণনাও দেন তিনি। ছেলে কুশলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি এখনও ওই বাড়িতে একা থাকেন। অভিনয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। নানা সময়ে মৃত্যুর গুঞ্জন শোনা যায়। হয়তো একদিন এভাবেই সত্যি সত্যি একবুক কষ্ট নিয়ে তিনি চলে যাবেন।

ভালো আছেন ববিতা। মন্দ বলবে কে? একমাত্র ছেলে অনিক কানাডাতে পড়াশুনা শেষ করে সেখানেই স্থায়ী। দেশে খুব কম আসা হয়। ববিতার বিয়ে হয়েছিল ব্যবসায়ী ইফতেখারের সঙ্গে। সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র দুই বছর। ববিতা একা থাকেন। মাঝেমধ্যে ছেলের কাছে গিয়ে থাকেন। রাইসুল ইসলাম আসাদের বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই আমেরিকায় থাকতে হয়। কারণ সেখানে তার স্ত্রী তাহিরা দিল আফরোজ ও একমাত্র মেয়ে ডা: রুবায়না জামান থাকেন। তাই স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রায় সময়ই রাইসুল ইসলাম আসাদকে আমেরিকায় যেতে হয়। কিন্তু মন তো টেকে না। ফিরে আসতে হয় বাংলাদেশে, অভিনয়ের মঞ্চে।

বিপরীতে এমন অনেক তারকা আছেন যারা বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন। খোঁজ রাখে না বাবা-মায়ের। সময় যেন তাদেরও জ্ঞান দেয়।

এমএ