ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


রিয়াজ-তিনার ভালোবাসার গল্প সিনেমাকেও হার মানায়


৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৫৫

ফাইল ফটো

সালমান শাহ পরবর্তী রোমান্টিক নায়ক হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অল্প দিনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন রিয়াজ। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাটক, উপস্থাপনা এবং বিজ্ঞাপনে সমান দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন।

জন্ম:
২৬ অক্টোবর, ১৯৭২ সালে ফরিদপুর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন রিয়াজ। তাঁর প্রকৃত নাম রিয়াজ ঊদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক।


পারিবারিক জীবন:
রিয়াজের জন্ম ফরিদপুর হলেও তাঁর পৈতৃক বাস যশোর জেলায়। বাবা মৃত জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা আরজুমান আরা বেগম একজন সু-গৃহিণী।

রিয়াজের বড় ভাই রাইজুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক এবং ছয় বোন রয়েছে সকলেই বিবাহিত।

রিয়াজের চাচাতো বোন সূচন্দা, ববিতা এবং চম্পা।

রিয়াজ ২০০৭ সালে বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী ও মডেল মুশফিকা তিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে:
রিয়াজ ও তিনার পরিচয় সূত্র হিসেবে কাজ করেছে রিয়াজের ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমাটি। হৃদয়ের কথা সিনেমার একটি গানের নাচের দৃশ্যে প্রথম পরিচয় হয় তাদের। সে সময় রিয়াজ প্রধান নায়ক হলেও তিনা ছিলেন সাধারণ একজন সহকর্মী। সেই গানের একটি দৃশ্য ছিল তিনা ঘুরে এসে নিচে বসে রিয়াজের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে, আর রিয়াজ তার হাত ধরে তাকে টেনে তুলবে। শুটিং শুরু হওয়ার পর তিনা রিয়াজের দিকে তার হাতটি বাড়িয়ে দেয় এবং রিয়াজ তার হাতটি ধরে তাকে টেনে তোলার জন্য। ঠিক এই সময়টাতেই ঘটে যায় অঘটন। পুরো শুটিং ইউনিটের সামনে রিয়াজ তিনাকে টেনে না তুলে বেশ কিছুক্ষণ তিনার হাত ধরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।


সেই গানের শুটিং এর পর থেকেই রিয়াজের মনে বাসা বেঁধে নেয় তিনা। তবে সে সময়ে তিনার মনে বাসা বাঁধতে পারেননি রিয়াজ। তিনার মনে রিয়াজের বাসা বাঁধতে আরও অনেকটা সময় লেগেছে।


সেদিনের শুটিং শেষে যে যার বাড়িতে চলে যায়। রিয়াজের মনের ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছেন তিনা। মনে মনে তিনার সাথে যোগাযোগ করার কোনো একটা মাধ্যম খুঁজছিলেন রিয়াজ। এক সময় সেই ছবির এক কর্মকর্তাই রিয়াজকে ফোন দেন। রিয়াজ কৌশলে সেই কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনাকে ফোন করান। এভাবেই দুজনের ফোন নাম্বার আদান-প্রদান হয়। এরপর বিভিন্ন সময় শুটিং বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও উপদেশের জন্য তিনা রিয়াজকে ফোন দিতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা। শুরুতে মোবাইলে রিয়াজ তৃনাকে শুটিং বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও এক সময় তা অন্য দিকে মোড় নেয়। এসময় তাদের কথাবলার বিষয় হয়ে যায় – কোথায় আছ, কি করছ, খেয়েছো কিনা ইত্যাদি। তবে কেউ কারো কাছে সরাসরি ধরা দিচ্ছে না। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর রিয়াজই প্রথম তিনাকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেন। সে সময় তিনা শুটিং এর জন্য বিদেশে যাচ্ছিলেন। এয়ারপোর্টে থাকাকালীন রিয়াজ তাকে ফোনে প্রস্তাবটি করেন। সে সময় তিনা কোনো উত্তর দেন নি। তিনার উত্তর পাওয়ার জন্য রিয়াজকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যেদিন বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন সেদিন বিকাল বেলায় অবশেষে তিনা রিয়াজের প্রস্তাবে সায় দেন।


এবার বাড়িতে বোঝানোর পালা। দুজনই একসময় বাড়িতে বোঝাতে সক্ষম হন। রিয়াজের বাড়ি থেকে তিনাদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়। তবে উভয় পরিবারের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলেও কোনো এক কারণে তদের বিয়ের বিষয়টি ঠিকভাবে এগোচ্ছিল না। দুই পরিবারের টুকটাক মতের অমিলের কারণে একসময় ভেঙেই যেতে বসেছিল তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। তারা দুজন এরকম সিদ্ধান্তও নিয়ে নিয়েছিলেন। প্রায় ৬ মাসের মতো তাদের দুজনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। ৬ মাস পর তিনার আগ্রহের কারণে আবার জোড়া লাগে তাদের ভাঙা ভালোবাসার সম্পর্কের। তাদের দুজনের ২য় প্রচেষ্টায় প্রায় দেড় বছর পর দুই পরিবারের মতের মিল অবশেষে হয়। ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাজে তাদের বিয়ের সানাই।


পড়াশোনা:

১৯৮৫ সালে এসএসসি পাশ করেন।
১৯৮৭ সাল যশোর ক্যানটনমেন্ট কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাশ করেন।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন।


অভিনয় জীবন:

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতার হাত ধরে রিয়াজের চলচ্চিত্রে আগমন। তাঁকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন প্রয়াত তারকা অভিনেতা জসিম এবং স্বনামধন্য অভিনেত্রী শাবানা। ১৯৯৫ সালে “বাংলার নায়ক” ছবিতে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রিয়াজ ভারতের বিখ্যাত পরিচালক মহেশ মাঞ্জেরেকারের “ইট ওয়াজ রেইনিং দ্যাট নাইট” নামে একটি ইংরেজী ছবিতে অভিনয় করছেন।

১৯৯৭ সালে রিয়াজ অভিনীত প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন রিয়াজ। ২০০৪ সালে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি শ্যামল ছায়াতে ঈমামের চরিত্রে অভিনয় করে দারুন আলোচিত হন।

এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সংক্ষিপ্ত গল্প শাস্তি অবলম্বনে একই শিরোনাম নির্মিত হয় চলচ্চিত্র শাস্তিতেও অভিনয় করেন রিয়াজ।

চলচ্চিত্র ছাড়াও রিয়াজ নাটক, উপস্থাপনা ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবা করছেন।


উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র

প্রাণের চেয়ে প্রিয়
হৃদয়ের আয়না
পৃথিবী তোমার আমার
ভালোবাসি তোমাকে
এ বাঁধন যাবেনা ছিড়ে
দুই দুয়ারী
মনের মাঝে তুমি
রং নাম্বার
শ্যামল ছায়া
শাস্তি
মোল্লা বাড়ীর বউ
হৃদয়ের কথা
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা
মন মানেনা
বিয়ের ফুল
বুক ভরা ভালবাসা
বিয়ের লগন
কি যাদু করিলা
নারীর মন
শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ


উল্লেখযোগ্য নাটক

উড়ে যায় বক পক্ষি
ওগো বধু সুন্দরী
তুলিতে আঁকা স্বপ্ন
যমুনার জল দেখতে কালো
হাবলঙ্গের বাজারে
বাদল দিনের প্রথম কদম
আমরা তিন জন
মেম সাহেব
পারমিতার দিনরাত্রী
অপরাহ্নের গল্প
মনের মধ্যে আকাশ


উপস্থাপনা

মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার ২০০৭
শাহ সিমেন্ট নির্মাণের তারকা ২০১০
শাহ সিমেন্ট নির্মাণের তারকা- ঈদ বিশেষ পর্ব ২০১০


বিজ্ঞাপন

ইউরো কোলা
ইউরো লেমন
ইউরো অরেঞ্জ
বার্জার ঝিলিক
নাসির ফ্লোট গ্লাস
একটেল ফুর্তি
নাসির ফ্লোট গ্লাস - পর্ব ২
একটেল ফুর্তি - পর্ব ২
ড্যানিশ কনডেন্সেড মিল্ক
হুইল পাওয়ার হোয়াইট
ইউরো লেমন – পর্ব ২
ইউরো কোলা – পর্ব ২


পুরস্কার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ২০০০, ২০০৭ এবং ২০০৯
মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার ১৯৯৮, ২০০১, ২০০২, ২০০৪ এবং ২০০৫
লাক্স চ্যানেল আই পারফর্মেন্স পূরস্কার ২০০৩ এবং ২০০৫
সি জে এফ বি পুরষ্কার ১৯৯৮


জনসচেতনতা

রাজবাড়িতে নিজ উদ্যোগে একটি দাতব্য চিকিত্সালয় নির্মান করেছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর অধীনে জাতীয় এইচ আই ভি/এইডস নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম ও জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম (এন টি পি) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন রিয়াজ


অন্যান্য কর্মকানণ্ড

রিয়াজ ইয়েস কর্পোরেশন লিঃ (কোমল পানীয় উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়াও আশিয়ান গ্রুপ এর পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।